ভিনসেন্ট ভ্যানগখ এর সাথে
ভিনসেন্ট
ভ্যানগখ আমার ভীষন প্রিয় শিল্পী। ভ্যানগখের ছবি দেখেই আমার পাশ্চাত্য শিল্পের সাথে
পরিচয়। ভ্যানগখ কত বড় মাপের শিল্পী তা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। আমি এখানে আমার
একান্ত ব্যক্তিগত অনুভূতি ব্যক্ত করব বলে ঠিক করেছি। তার আগে কতগুলি জানা তথ্য
জানিয়ে রাখি,
১) ভ্যানগখ
মোট ১০ বছরে মোট ৯০০ ও বেশি ছবি একেছিলেন যার মধ্যে মাত্র ১ খানা তার জীবিতকালে
বিক্রি হয়েছিল। আর এখন আপনার অঢেল পয়সা থাকলেও ভ্যানগখের ছবি কিনতে পারবেন না। এখন
ভ্যানগগের ছবি কিনতে চাওয়া মানে মাউন্ট এভারেস্ট কেনার ইছার মতই অবাস্তব।
২) ভ্যানগখ
অসম্ভব ভালো লেখক ছিলেন। ছবির সমসংখক চিঠি (প্রায় ৮০০) উনি তার ছোটভাই থিওকে লিখে
গেছেন। ভ্যানগখ তাঁর নিজের জীবনে তেমনভাবে পরিচিতই ছিলেন না। আর ভ্যানগখের সময়
জর্জিও ভাসারির মত কোন ধারাবিবরক ও ছিল না। তাই ভ্যানগখের লেখা চিঠিগুলিই তাঁর
আত্মজীবনী। থিও সারাজীবন তাঁর এই সৃষ্টিশীল পাগলাটে ভাইকে নানাভাবে সাহায্য করে
গেছেন। রঙ, তুলি কেনা থেকে শুরু করে ক্রমাগত উৎসাহ দেওয়া কোনটারই কমতি ছিল না।
নিজে আর্ট ডিলার হওয়া স্বত্ত্বেও নিজের ভাইয়ের ছবি বিক্রি করতে পারেন নি। আমার মনে
হয় যদি সাফল্য পেতেন তবে ভ্যানগখ হয়ত আরো কিছুদিন বেঁচে থাকতে পারতেন হয়ত আরও অনেক
আশ্চর্য শিল্পকলার আমদানি হত। এই থিওর স্ত্রী য়োয়ানার উদ্যোগেই ভ্যানগখ আজ এত জনপ্রিয়। থিওর মৃত্যুর পর তিনি
ভ্যানগখের প্রচারে নিজের জীবন নির্বাহ করেন।
৩) ভ্যানগখের
ছবি কেউই সময় থাকতে বুঝতে পারেন নি। নইলে সেই সময়কার বিখ্যাত ছবির কারবারি
আঁব্রোসিউ ভোইয়য়া, যাঁর মূল পেশাই ছিল ছবির মূল্য বিচার করা তিনিও ভ্যানগখের
মৃত্যর পর ছবিগুলি নামমাত্র মূল্যে বেচে দেন পল রোজেনবার্গের কাছে।
৪) বুভরয়ের নামে
নেদারল্যাণ্ডের এক পুরানো জিনিস বিক্রেতা এক বস্তা ভ্যানগখের ছবি কিনেছিলেন মাত্র
২১ গিল্ডারে। তার মধ্যে কয়েকশ আবর্জনা মনে করে ফেলে দেন। এমনকি গখের মা কয়েশ
পেইন্টিং আবর্জনা ভেবে ফেলে দিয়েছিলেন। আমি আপনি এর মধ্যে একখানা করে পেলে আজ তা
বিক্রি করে সারাজীবন বসে খেতে পারতাম। ভ্যান গখ এমনই এক ট্রাজেডির নাম।
৫) ভ্যানগখের
ছবিগুলি বিখ্যাত হওয়া শুরু করে ১৯১৪ সালে তাঁর ভাই থিওকে লেখা চিঠিগুলি বই আকারে
প্রকাশের পর থেকেই।
তেলরঙ শোকাতে
সময় নেয়, ফলে একটি ছবি শেষ হতে সময় লাগে অনেক। একবার শুকিয়ে গেলে পরে তার উপর আবার
রঙ চাপানো হয়। এইভাবেই মাস্টারপিসগুলি গড়ে ওঠে। ভ্যানগখ তুলনায় খুব দ্রুত ছবিগুলি
শেষ করতেন। একবার এমনই এক প্রদর্শনীতে এক দর্শক ভ্যানগখের ছবিগুলি দেখে তাড়াতাড়ি
আঁকা হয়েছে বলে সমালোচনা করলে থিও চিঠিতে তা দাদাকে জানান। যার উত্তরে ভ্যানগখ
বলেন, সেই দর্শক হয়ত ছবিখানা তাড়াতাড়ি দেখেছেন। এমনি ছিল তাঁর নিজের শিল্পের প্রতি
আস্থা। নইলে ছবি বিক্রি হচ্ছে না তবুও তিনি তাঁর কৌশল বদলাননি। বদলালে হয়ত ইউরোপের
অনেক মধ্যবিত্ত গৃহের দেওয়ালে তাঁর শিল্প শোভা পেত। ভ্যানগখ যে পদ্ধতিতে ছবি এঁকে
গেছেন তা পরবর্তিকালে কেউ অনুসরণ করতে পারে নি। তাই ভ্যানগখ আজও অনবদ্য। যদিও এই
জার্নি সম্পুর্ণ হতে প্রায় একশ বছর লেগেছে।
আজ পৃথিবীর
সমস্ত বিখ্যাত সংগ্রহশালায় ভ্যানগখের ছবি দেখতে পাওয়া যায়। ভ্যানগখের কোন ছবি না
থাকলে সে মিউজিয়াম সম্পূর্ণই হয় না। না থাকলে তারা লোন করেন অন্য মিউজিয়াম থেকে।
এইভাবেই ভ্যানগখের ছবিগুলি সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়ায়। তাঁর নিজের দেশ নেদারল্যান্ডের
আমস্টারডাম শহরে ভ্যানগখ মিউজিয়ামে একসাথে অনেক ছবি দেখতে পাওয়া যায়। পৃথিবীতে আর
কোথাও ভ্যানগখের এত ছবির স্থায়ী একক প্রদর্শনী নেই। যেকোন উৎসাহী শিল্প রসিকের
কাছে এ এক মহাতীর্থ। বারবার গেলেও যার মাহাত্ম্য ফুরায় না। পুরো বিল্ডিং জুড়েই গখ।
একদম উপরের তলায় থিওর সেই বিখ্যাত স্টাডি টেবল যার মধ্যে খোপ খোপ করা। সেখান থেকেই
পাওয়া গেছিল ভ্যানগখের অসংখ্য চিঠিগুলি যা তিনি থিওকে নিয়ম করে লিখতের আর যা থিও
যত্ন করে রেখে দিতেন। আর সারা শিল্প বিশ্ব থিওর কাছে এই একটিমাত্র কারনে ঋণী
থাকবে। আজ ভ্যানগখ নেই, থিও নেই কিন্তু সেই চিঠিগুলি থেকে লেখা হয়েছে উপন্যাস,
হয়েছে সিনেমা আরো কতকিছু গবেষকরা জানতে পেরেছেন। এই টেবিলের সামনে দাঁড়ালে আজও
ভ্যানগখকে অনূভব করা যায়।
ভ্যানগখ কারোর
কাছে শিল্পশিক্ষা নেন নি। তাই ভ্যানগখের মধ্যে কোন নির্দিষ্ট ধারার প্রভাব নেই।
ভ্যানগখ নিজেই নিজের প্রভাব। যদিও তাঁর মৃত্যুর ৩-৪ বছর আগে তিনি প্রথাগত ট্রেনিং
নিয়েছিলেন। কিন্তু বদলায়নি তাঁর ট্রেডমার্ক স্টাইল।
ভ্যানগখ জীবনের
শুরুতে ধর্মগুরু হবার ট্রেনিং নিয়েছিলেন কিন্তু মনে করতেন ল্যাটিন এক মৃত ভাষা যা
সাধারণ মানুষের বোধগম্য নয়। তার ফলে তিনি সেই শিক্ষা শেষ করতে পারেন নি। আশ্চর্য
লাগে ভ্যানগখ নিজের কোন ছবিতেই বিবলিকাল ঘটনার ব্যবহার করেন নি। বরং সাধারণ
মানুষের দৈনন্দিন জীবন তাঁকে সাংঘাতিক ভাবে নাড়া দিত। ডাচরা সাধারণত লম্বা মেদহীন
চেহারার হয়। একবার এক ডাচকে জিজ্ঞেস করেছিলাম এর পেছনে কারণ কি। তার উত্তরে যা
বুঝেছিলাম সাধারণত গরীব চাষিরা একটু মোটাসোটা হয়। কারণ তাদের খাদ্যদ্রব্যে
অপুষ্টিকর খাবারের পরিমান বেশি থাকে। কী খায় জিজ্ঞেস করাতে জানলাম সাধারণত আলু।
সাথে সাথে মনে পড়ে যাচ্ছিল ভ্যানগখের সেই বিখ্যাত "পোটাটো ইটার্স"
ছবিটার কথা যা আমস্টারডামের এই মিউজিয়ামে রাখা আছে। যার সামনে দাঁড়ালে মনে হয়
ভ্যানগখই বোধহয় শেষ গোল্ডেন ডাচ মাস্টার।
ভ্যানগখের বেশিরভাগ ছবিই উজ্জ্বল। কিন্তু এই ছবিটির রঙ বিষণ্ণ। সবজে-বাদামী রঙে
আঁকা এই ছবি দেখলে মন খারাপ হয়ে যায়। গখ ঠিকই বলেছেন, তাঁর ছবি অনেকটা সময় নিয়ে
দেখতে হয়। এই ছবির সাথে মানুষ ভ্যানগখ
একাত্ম হয়ে আছেন।
নানান বিখ্যাত
ছবির কপি তিনি বানিয়েছেন। শিল্পীদের কাছে এই ব্যাপারটা নিত্যনৈমিত্তিক। মাস্টারপিস
থেকে কপি করা ট্রেনিং এর অঙ্গ। কিন্তু
ভ্যানগখ এখানেও স্বতন্ত্র। আমস্টারডামের মিউজিয়ামে ভ্যানগখের কপিগুলির পাশাপাশি
আসল ছবিগুলি রাখা আছে যা দেখলে বোঝা যায় ভ্যানগখ কপিও করতেন নিজস্ব স্বতন্ত্রতা
বজায় রেখে। কিছু জাপানি প্রিণ্টের কপি তিনি করেছিলেন যা আলাদা করে দেখলে বোঝাই
যাবে না যে সেগুলি তাঁর স্বতন্ত্র ছবি নয়।
মাত্র ৩৭ বছর
বয়েসে বিষণ্ণ ভ্যানগখ নিজেকে গুলি করেন। গুলি খাওয়ার পর মাত্র কিছুক্ষণ বেঁচে
ছিলেন। খবর পেয়েই ভাই থিও ছুটে আসেন। দাদা মারা যাওয়ার পর থিও নিজেও বেশিদিন
বাঁচেন নি। পরবর্তিকালে থিও ও ভ্যানগখকে পাশাপাশি কবরস্থ করা হয়। দুই ভায়ের এইরকম
টান ইতিহাসে খুব বেশি নেই।
পিকাসোর মত খুব
কম শিল্পী আছেন যারা নিজের জীবদ্দশায় সাফল্যের মুখ দেখেছিলেন। ভ্যানগখ যদি আরও
কিছুদিন বাঁচতেন তাহলে সাফল্যের পাশাপাশি হয়ত নিজের ভালোবাসার সঙ্গিণীও পেতেন, যার
স্বপ্ন তিনি বরাবর দেখতেন। অজস্র যন্ত্রণা
নিয়ে ভ্যান গখ তাঁর ছবিগুলির মধ্যে বেঁচে থাকবেন।
-ঋজু ঘোষ, ২৭
মার্চ ২০২০, ব্যাঙ্গালোর
Goyo Casino Review | Get a 150% Bonus at Goyo
ReplyDeleteGoyo Casino offers 125 해외야구 chances หารายได้เสริม to win up 예스 벳 to 500 Free Spins. Slots are 벳 365 also available from this site. You can get 100% up 바카라 사이트 온라인 바카라 to 500 Bonus