Cooch Behar a Pop History (ইতিকথায় কোচবিহার)

 



        বর্তমান পশ্চিমবঙ্গে "রাজবাড়ী" বলতে যা বোঝায় তা বেশিরভাগই জমিদার বাড়ি। তৎকালীন অবিভক্ত বাংলায় জমিদার ছাড়াও বেশ কিছু রাজা ছিলেন। পলাশীর যুদ্ধের পরে ইংরেজরা রাজত্ব শুরু করলে তারা কমবেশি সকলেই ছোট বা বড় জমিদার হিসাবে পরিণত হন। খাতায়-কলমে একমাত্র কোচবিহারই করদ রাজ্য হিসেবে পরিগণিত হয়। কেবলমাত্র ভৌগলিক পরিধির উপর বিচার করেই একে দেখলে চলবে না। কোচবিহার রাজ্যের সুপ্রাচীন ইতিহাস আছে। আসুন ভাগে ভাগে আমরা সেই ইতিহাসকে হালকাভাবে জেনে নি।


ভণিতা বা স্বীকারোক্তি


        ইতিহাস নিয়ে বলতে গেলে নানা রকম ঐতিহাসিক তথ্য দরকার পড়ে। এই তথ্যগুলি জোগাড় হয় পূর্বের কোন ঐতিহাসিক গবেষণার ফলাফল থেকে অথবা সমকালীন লেখাপত্র থেকে। কোচবিহারের ইতিহাস সম্পর্কে অনেকের যেরকম ভাসা-ভাসা ধারণা রয়েছে আমারও ঠিক তেমনি। অল্পস্বল্প কয়েকজন রাজা উজিরের নাম জানলেও আসলে কোচবিহারের ইতিহাস বেশ জটিল ও দীর্ঘ।


        কোচবিহারের ইতিহাস নিয়ে প্রামাণ্য গ্রন্থ লিখেছেন আমানাতুল্লা আহমেদ। বহু তথ্য এই গ্রন্থ থেকেই পাওয়া যায়। তেমনই প্রাচীন কোচবিহারের ইতিহাস জানতে গেলে গোঁসানীমঙ্গল কাব্যের উপর অনেকটাই ভরসা করতে হয়। এছাড়াও অনেক ঐতিহাসিক কোচবিহার তথা কামরূপের ইতিহাস নিয়ে কমবেশি লিখে গেছেন। রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর "বাঙ্গালার ইতিহাস" বইটিতে হুসেন শাহের কামতাপুর আক্রমণের ঘটনার দীর্ঘ বিবরণ দিয়েছেন। এছাড়াও নীহাররঞ্জন রায় (বাঙালির ইতিহাস) ও দীনেশচন্দ্র সেন (বৃহৎ বঙ্গ) তাঁদের বইগুলিতে কোচবিহার নিয়ে যথাযথ ক্ষুদ্র কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন।


        আমার এই লেখা কোন মৌলিক গবেষণা নয়। আমি নানারকম গ্রন্থ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তাকে এক সূত্রে গাঁথার চেষ্টা করেছি মাত্র। সিরিয়াস প্রবন্ধের মত প্রতি ছত্রে ছত্রে রেফারেন্সের দরকার নেই এতে। বরং শেষে প্রামাণ্য গ্রন্থের একটা তালিকা পেলে উৎসাহী পাঠক আরো বেশি পড়াশোনা করার সুযোগ পাবেন।

        এটুকুই আশা রাখি --- ভুল ত্রুটি হলে ঠিক করে দেবেন, শুধরে নেব। সময় ধরবার জন্য মাঝে মাঝে সাল তারিখের দরকার পড়বে, তাতে সামগ্রিক ভারতবর্ষের বাকি ঘটনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সাহায্য পাওয়া যাবে।


        আসলে আমার এই সামান্য প্রচেষ্টা আমার প্রিয় শহর কোচবিহারকে জানার এক অদম্য ইচ্ছারই ফসল। আমার এই জানার প্রচেষ্টায় আসুন আপনারাও সামিল হন।


        এই ইতিহাসকে আমি মূলত তিন ভাগে ভাগ করার চেষ্টা করেছি। প্রথমভাগে "খেন" বা সেন বংশের রাজত্বকাল --- যেখানে তিনজন রাজা (নীলধ্বজ, চক্রধ্বজ ও নীলাম্বর বা কান্তেশ্বর) রাজত্ব করেছেন। এর পরেই আমরা ধরার চেষ্টা করব মধ্যযুগ অর্থাৎ চন্দন ও বিশ্বসিংহের সময়কাল থেকে। আধুনিক যুগ শুরু হবে রাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ-এর সময় থেকেই। যিনি কোচবিহারকে তৎকালীন ভারতবর্ষের মানচিত্রে স্থায়ী ঠিকানা দিয়েছিলেন।

১ --- কোচবিহারের ভৌগলিক পরিচিতি ও সামাজিক অবস্থান 




            ভৌগোলিকভাবে কোচবিহারকে জানতে গেলে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে বেশি কিছু না বললেও চলে। টুক করে গুগল ম্যাপ খুলে কোচবিহার দেখলেই তা বোঝা যায়। তাও বলতে গিয়ে এইটুকুই বলার যে, কোচবিহার হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত একটি সমতল অঞ্চল। কোচবিহার শহরের মধ্যে কোন পাহাড় বা উঁচু টিলা জাতীয় কিছু নেই। যদিও পাহাড়ের খুব কাছেই এর অবস্থান। পাহাড়ের অত্যন্ত কাছে অবস্থানের জন্যে এখানে ছোট-বড় শাখা ও উপ নদ-নদী দেখা যায়। নানারকম নদ ও নদী শিরা-উপশিরার মত কোচবিহার রাজ্যের অভ্যন্তরে প্রাণ সঞ্চার করে। এই নদীগুলির ধারা প্রবাহিত পলিমাটি দিয়ে ঊর্বর কোচবিহারে প্রচুর পরিমাণে পাট, ধান ও তামাকের চাষ হয়। পাট ও ধান চাষে মূলত প্রচুর পরিমাণে জলের প্রয়োজন হয়।


        উল্লেখযোগ্য নদীগুলির মধ্যে তিস্তা, কালজানি তোরসা, গদাধর, রায়ডাক ইত্যাদি প্রমূখ। এই নদীগুলি দিয়ে একসময় ব্যবসা-বাণিজ্য ও যাতায়াতের জন্য নৌকা চলাচল করত। এছাড়াও প্রচুর আরো ছোট ছোট উপনদী ও শাখানদী পাওয়া যায় কোচবিহার রাজ্যের অভ্যন্তরে।


        এই পাট ও তামাকের ব্যবসায়ী হিসেবে বহু মাড়োয়ারি কোচবিহার শহরে কয়েক প্রজন্ম ধরে বসবাস করছেন। এমন কিছু মাড়োয়ারি আছেন তারা মাড়োয়ারি কম বাঙালি বেশি। আলাদা করে তাদের সাথে মিশলে বোঝা মুশকিল তারা আসলে ঠিক কোন ভাষার মানুষ।


        নদীদ্বারা পরিবেষ্টিত হলেও কোচবিহার শহরে কোন প্রাকৃতিক জলাধার নেই। কিন্তু কোচবিহার রাজ্যের রাজধানী, যেখানে রাজাদের রাজবাড়ী ছিল সেই কোচবিহার শহরে বহু সুরম্য দিঘী দেখতে পাওয়া যায়। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় দিঘি হল সাগরদিঘি। এছাড়াও মদনমোহন মন্দির সংলগ্ন বৈরাগী দিঘি সহ প্রায় ৩৫-৪০ টি দিঘি কুচবিহার শহরে একসময় খনন করা হয়েছিল। এই দিঘিগুলির মূল উদ্দেশ্য ছিল একঃ পানীয় জলের সরবরাহ, দুইঃ আগুন লাগলে জল দরকার পড়ে। তাই বাজারসংলগ্ন এলাকাগুলিতে একটি করে দিঘি থাকত। মূলত পারিবারিক খনন করা জলাশয়গুলোকে পুকুর বলা হয়। সেগুলি আকারে ছোট হয়। এই দিঘিগুলি নগর স্থাপত্যের অংশ।


        সাগরদিঘির আশপাশে সরকারি অফিস অবস্থিত ছিল যা এখনও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। শহরের একটি কোনে, রাজবাড়ীর প্রধান গেট থেকে সোজা যে রাস্তাটি বেরিয়ে এসেছে তার আরেক প্রান্তে নীলকুঠি বলে একটি জায়গা আছে। যেখানে একসময় ব্রিটিশ রাজকর্মচারীরা বসবাস করতেন। নীলকুঠি সংলগ্ন এলাকাতে একটি ছোট এয়ারপোর্ট ছিল। সেই এয়ারপোর্ট সংলগ্ন মাঠে একটি লাল রঙের সুন্দর বাড়ি দেখা যেত। শেষ মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণের ভাই কুমার ইন্দ্রজিৎ নারায়ণের। তিনি ছিলেন দ্বিতীয় রাজার মতন। কোচবিহারের জনগণ এই সুদর্শন কুমারকে অত্যন্ত ভালোবাসত। তাই যেখানেই তিনি যেতেন প্রচুর ভিড় তাঁকে ঘিরে ধরত।


        কোচবিহার শহরের চারপাশে বহু নদনদী থাকার জন্য জল অত্যন্ত সহজলভ্য। বাড়িঘর তৈরি সময় যে সামান্য গর্ত করার দরকার হয় তাতেই হুড়হুড় করে জল বেরিয়ে আসে। তাই পুরানো কোচবিহার রাজ্যের অনেক বাড়িতেই নিয়ম করে কুয়ো বা ইঁদারা থাকত, যা সারা বছর ধরেই পানীয় ও অন্যান্য কাজের জন্য জল সরবরাহ করত।


        কোচবিহার শহরে নানা ধর্মের ও ভাষার লোকজন বসবাস করে। ধর্মের বিচারে দেখলে কোচবিহারে হিন্দু ও মুসলমান দুই প্রধান জনগোষ্ঠী। এছাড়াও খ্রিস্টান এবং জৈনধর্মের লোক পাওয়া যায়। এছাড়াও নানা কাজের সূত্রে আসা সাঁওতাল ও কিছু আদিম জনজাতির মানুষজন এখানে বসবাস করেন। বর্তমানে ভারতবর্ষের সব ভাষারই কমবেশি লোকজন কোচবিহারে দেখতে পাওয়া যায়।


        ইংরেজ রাজত্ব শেষ হওয়ার পরে প্রায় সমস্ত ইউরোপিয়ান কোচবিহার ছেড়ে চলে গেছেন। তাই কচিত কদাচিৎ যে সমস্ত বিদেশী কোচবিহারে দেখতে পাওয়া যায় তারা মূলত পর্যটক হন। বসবাসকারী অভারতীয় নেই বললেই চলে। বিবাহসূত্রে ইদানিং দু-একজন বিদেশি কোচবিহারে বসবাস করছেন ঠিকই। কিন্তু সেই অর্থে কোচবিহার অভারতীয় জনগোষ্ঠীর কোন সঠিক সংখ্যা বহন করেনা।

২ --- গোসানীমারি বা প্রাচীন কামতাপুর






        কোচবিহারে যে শেষ রাজবংশ রাজত্ব করেছিল তাঁদের উপাধি ছিল "নারায়ণ"। নারায়ণ উপাধিধারী রাজপরিবারের রাজ্যকাল শুরু হয় পালবংশের পতনের পর থেকেই। বাংলায় শেষ পালরাজার পতনের পর রাজা নীলধ্বজ এই রাজ্যে শাসন শুরু করেন। তারপরে চক্রধ্বজ ও নীলাম্বর রাজা হন। নীলাম্বরের অপর নাম ছিল কান্তেশ্বর। কোচবিহার রাজ্যের বর্তমান দিনহাটা শহরের নিকটে অবস্থিত গোসানীমারি নামক অঞ্চলে নীলাম্বরের রাজধানী ছিল। এই গোসানীমারি কেন্দ্রিক রাজ্য পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষ প্রান্তে এসে হুসেন শাহ দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। যার ধ্বংসাবশেষ আজও দেখতে পাওয়া যায়। সিঙ্গিমারী (যা বর্তমানে মানসাই নামে পরিচিত) একটি নদীর বন্যায় এই রাজধানীর বহু কীর্তি নষ্ট হয়েছে।


        এই কামতাপুর-এর গোসানিমারি হল দুর্গ ও রাজধানী। ডক্টর বুকানন হ্যামিল্টন ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে এই দুর্গের ধ্বংসাবশেষ পর্যবেক্ষণ করে এক তথ্যপূর্ণ গবেষণাপত্র লেখেন। আজকের দিনে যার মূল্য অপরিসীম। ডক্টর বুকাননের মতে তৎকালীন বাংলায় কামতাপুর দুর্গের সমকক্ষ শক্তিশালী কোন তুলনা পাওয়া যায় না।


        মাটির প্রাচীর ও সুগভীর পরিখা দিয়ে ঘেরা ছিল এই দুর্গ বা রাজধানী। তিনটি মূল দরজা দিয়ে এই দুর্গে প্রবেশ করা যেত। তারা যথাক্রমে বাঘদুয়ার, জয়দুয়ার ও হোকোদুয়ার নামে বিখ্যাত। ডক্টর বুকানন যখন এই দুর্গ পরিদর্শন করেন তখন সিঙ্গিমারী নদী দুর্গকে দুই ভাগে ভাগ করে রাখত। কিন্তু কয়েক বছর পরেই এক প্রবল বন্যায় মানসাই নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়। এরপরই মানসাই সিঙ্গিমারী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়। তাই ডক্টর বুকাননের বর্ণনার সঙ্গে আজকের ভৌগলিক গোসানীমারির মিল পাওয়া যাবে না।


        এই দুর্গের ঠিক মাঝখানে একটি রাজবাড়ি ছিল যাকে রাজপাট বলা হত। এই রাজপাট আবার গভীর পরিখা দিয়ে ঘেরা থাকত। পানীয় জল সরবরাহের জন্য ছোট-বড় পুকুর ও দিঘি খনন করা হয়েছিল এই দুর্গের ভেতর।


        এই কামতাপুর শাসন করেন যথাক্রমে নীলধ্বজ, চক্রধ্বজ ও নীলাম্বর। এরমধ্যে চক্রধ্বজ প্রতিষ্ঠা করেন কামতেশ্বরী দেবীর মন্দির। এই আদিম মন্দির হোসেন শাহ দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় ও বর্তমানে এর সঠিক স্থান খুঁজে পাওয়া যায় না। কামতেশ্বরী দেবী অথবা গোসানীদেবীর কোন মূর্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। বর্তমানের এই মন্দিরে কবজ পুজো করা হয়। উনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে যখন ডক্টর বুকানন গোসানীমারি সম্বন্ধে লেখালেখি করছেন সেই সময়ই রচিত হয় গোসানীমঙ্গল কাব্য। ঘটনার ১৫০ পরে লিখিত এই কাব্যগ্রন্থ তাই অনেকটাই জনশ্রুতি নির্ভর। এখানে উল্লেখিত তিনজন রাজার সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছেন নীলাম্বর, যিনি কান্তেশ্বর নামেও পরিচিত।


        এর পরবর্তী অধ্যায়ে আমরা সেই কিংবদন্তী নিয়ে আলোচনা করব। জেনে নেব তিনজন রাজার সম্বন্ধে, যাদের অনেকটাই জনশ্রুতি নির্ভর। যার কোন তথ্যগত ও তথাকথিত ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই।।



৩ --- প্রাচীন যুগ --- খেনবংশের শাসনকাল


        প্রাচীন ভারতের ইতিহাস নিয়ে লিখতে গেলে তথ্যের অপ্রতুলতা চোখে পড়ার মতো। তার উপর কোচবিহার এক আঞ্চলিক স্থান, যার ভারতের সামগ্রিক ইতিহাসের উল্লেখ্য প্রায় নেই বললেই চলে। তার প্রাচীন কিছু নিয়ে বলতে গেলে দেশীয় প্রচলিত গল্পকথার উপরে অনেকটা নির্ভর করতে হয়।
        কোচবিহারের ইতিহাসে যে প্রাচীন যুগের কথা আমরা শুরুতেই স্বীকার করে নিয়েছি তাতে তিনজন মূল রাজার নাম পাওয়া যায়। এঁরা হলেন যথাক্রমে নীলধ্বজ, চক্রধ্বজ ও নীলাম্বর। আমরা এই অংশে এঁদের নিয়েই আলোচনা করব। নীলাম্বর যেহেতু শেষ এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ একটা অধ্যায়ের অঙ্গ তাই এঁকে নিয়ে আলাদা আলোচনার প্রয়োজন হয়ত আছে। নীলাম্বর কে নিয়ে বিস্তারিত বলার আরও একটি কারণ হোল সেই সময়কে ধরে রাখার জন্য গোঁসানীমঙ্গল কাব্য রচিত হয়েছিল। ঐ নীলাম্বরের সময়েই বাংলার সুলতানদের দ্বারা কোচবিহার তথা কামতাপুর ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।         কামতাপুর এক প্রাচীন রাজ্য। অনেকে একে প্রাগ্জ্যো‌তিষপুর বলেন। পুরাণের যুগে থেকে একটু এগিয়ে এসে দেখলে --- আসাম, রংপুর, রাঙামাটি, ময়মনসিংহ, শ্রীহট্ট ও কোচবিহার ইত্যাদি অঞ্চল নিয়ে এই সমগ্র কামরূপ রাজ্য বিস্তৃত ছিল। অর্থাৎ বর্তমানকালের আসাম, বাংলাদেশ, কোচবিহার জেলার কিছু অংশ নিয়ে ছিল কামরূপ। কামরূপের কোচবিহার অঞ্চলটির নাম ছিল "রত্নপীঠ"।         আমরা যে সময়টাকে ধরার চেষ্টা করছি সেই সময়ে বাংলায় শাসন করছেন পাল রাজারা। ধর্মপাল, মহীপাল ইত্যাদি পালরাজার নামাঙ্কিত তাম্রশাসন ও মুদ্রা আবিষ্কার হয়েছে কোচবিহার থেকে অনতিদূরে অবস্থিত রংপুরের কাছে তিস্তা নদীতে।

নীলধ্বজ:

        পাল বংশের শেষের দিকে নীলধ্বজ নামক এক ব্যক্তি পাল বংশের শেষ রাজাকে হত্যা করে তার সিংহাসন অধিকার করেন। নীলধ্বজ সম্বন্ধে কোন তথ্য প্রমাণাদি পাওয়া যায় না। বেশিরভাগই কিংবদন্তি। এইরকমই কোন এক কাহিনীতে এক ব্রাহ্মণের গোরক্ষক বা রাখাল বলে তাঁর পরিচিতি দেওয়া হয়েছে। কাহিনীতে এও বলা আছে যে, ব্রাহ্মণ সেই গোরক্ষক বালকের ভাগ্যগণনা করে বুঝেছিলেন তিনি ভবিষ্যতে শাসন করবেন। অর্থাৎ রাজা হবেন। তিনি এই শর্তে রাখাল বালককে কর্ম থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন, যে যদি সে রাজা হতে পারে তাহলে ব্রাহ্মণ যেন সেই রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যোগদান করার সুযোগ পান। নীলধ্বজ রাজা হওয়ার পরে সেই শর্ত রেখেছিলেন। এই মন্ত্রীর নির্দেশে নীলধ্বজ কামরূপ রাজ্যের রাজধানী গৌহাটি থেকে বর্তমান কামতাপুরে স্থানান্তরিত করেন।         পরবর্তীকালে এই মন্ত্রী মিথিলা থেকে প্রচুর ব্রাহ্মণকে কামরূপে স্থায়ীভাভবে বসবাস করার আমন্ত্রণ জানান। এর ফলে কুচবিহার শহরে বসবাসকারী বহু মৈথিল ব্রাহ্মণ দেখা যায় যারা কয়েকশো বছর ধরে পুরুষানুক্রমে কোচবিহার শহরে বা তার আশেপাশে বসবাস করছে বর্তমানে গোসানীমারি মন্দির আছে তার প্রধান পুরোহিত এক মৈথিলি ব্রাহ্মণ। এই নিয়ে আমরা পরে বিস্তারিত আলোচনা করব নীলাম্বর পর্বে।

চক্রধ্বজ:

        এঁর সম্বন্ধে বেশি কিছু জানা যায় না। তবে তিনি নীলধ্বজের পরে ইনি রাজা হয়েছিলেন এবং এই কামতেশ্বরী দেবী তাঁরই প্রতিষ্ঠা করা। (ক্রমশ)

Comments

  1. মানসাই নদী বাদ গিয়েছে

    ReplyDelete
    Replies
    1. ঠিক কথা আসলেই কত নদী আছে। সবার নাম না লিখে ওইজন্যেই 'প্রভৃতি' লিখে দিলাম। আমাদের আসল উদ্দেশ্য ইতিহাস। তার আগে একটা ভৌগলিক পরিচিতি ।

      Delete

Post a Comment

Popular posts from this blog

ভিনসেন্ট ভ্যানগখ এর সাথে

ডাচ গোল্ডেন এজ, রেমব্রান্ট ও নাইট ওয়াচ